
কুয়েত বাংলাদেশ প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ
আবু নাসের মহিউদ্দিন,
প্রকাশক দৈনিক পুনর্জাগরণ বিডি ২৪,
বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ ১৯ অক্টোবর ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সংলাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপাক্ষিক) ড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব সামীহ ইসা জোহর হায়াত স্ব স্ব পক্ষের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন, ওএসপি, এডাব্লিউসি,পিএসসি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত জনাব আলী থুনায়ান হামাদাহ।
উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সালে কুয়েত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান এবং ১৯৭৪ সালে ওআইসি-এর সদস্যপদে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কুয়েতের সমর্থনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করে। দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, জনশক্তি, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে একমত হয়।
উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত নেন যে, এ সংলাপ প্রতি দুই বছর অন্তর ঢাকা ও কুয়েতে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও তাঁরা সরকারের উচ্চ পর্যায়, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে পারস্পরিক সফর বিনিময়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন’-এর অধীনে কুয়েতের পুনর্গঠনে বাংলাদেশের অবদান কুয়েত প্রতিনিধিদল কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করেন এবং প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবেলা ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়। তাঁরা ‘কুয়েত ভিশন-২০৩৫’ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনবল সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং বিবেচনাধীন সমঝোতা স্মারকগুলি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
উভয় পক্ষই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপর - বিশেষ করে জ্বালানি, অবকাঠামো, আইসিটি, খাদ্য নিরাপত্তা ও হালাল খাদ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেন। বাংলাদেশ কুয়েতি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানায়। তাঁরা যৌথ বাণিজ্য কমিটি পুনরায় সক্রিয় করতে এবং ২০২৬ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত ব্যবসায়িক ফোরাম গঠন করতে সম্মত হন।
দুই দেশ কুয়েত ফান্ডের সহায়তায় চলমান প্রকল্পে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো ও বিমানপথ সংযোগে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করে।
উভয় পক্ষ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং কুয়েত ডিপ্লোম্যাটিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং দুই দেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক প্লট বিনিময় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
উভয় দেশ জাতিসংঘ ও ওআইসি’র মতো বহুপাক্ষিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটে কুয়েতের মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় এবং তাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে একত্রে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ যথাক্রমে ইউনেস্কো, ইউএনএইচআরসি এবং আইএইএ-তে কুয়েতের প্রার্থীতার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে। এছাড়াও, সফররত রাষ্ট্রদূত জোহর হায়াত বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন।
দ্বিপাক্ষিক এই সংলাপ কুয়েত ভিশন ২০৩৫’ এর অধীনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত একটি বিস্তৃত, দূরদর্শী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ এবং কুয়েতের যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
আজ ২০ অক্টোবর ২০২৫ ইং।